নরসিংদী পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে তিনতলা বাড়িতে থাকেন কিরণ শিকদার। অথচ এত বড় বাড়তে জায়গা হল না তার মা মরিয়ম বেগমের। মা বৃদ্ধা হওয়ায় তাকে রাখা হয়েছে ভাড়া করা অন্যের একটি ভাঙা একটি টিনের ঘরে।
মরিয়ম বেগম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকার মৃত মজনু মিয়ার স্ত্রী। ২০ বছর আগে মারা যান স্বামী মজনু মিয়া। তার একমাত্র ছেলে কিরন শিকদার স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ও ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
স্ত্রীর কথায় গত রমজান মাসে বৃদ্ধা মাকে পাশের নতুন বাজার এলাকার গফুর মিয়ার একটি ভাঙা টিনের ঘরে রেখে গেছেন ছেলে কিরন। সেখানে গিয়ে ছেলে মাঝেমধ্যে কিছু বাজার কিনে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলেও বৃদ্ধা মরিয়মের দেখাশোনা করছেন পাশের ভাড়াটিয়ারা।
স্থানীয়রা জানান, লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে হাঁটতে পারেন মরিয়ম। যেখানে মরিয়ম থাকেন, সেখানে ঘরের ভেতর একটি পুরোনো তোষক, আর কয়েকটি থালাবাসন ছাড়া কিছুই নেই।
মরিয়ম বেগম জানান, ছেলের বউ আমাকে তাদের সাথে রাখতে চায় না। তাই ছেলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। ছেলে মাঝে মধ্যে এসে আমাকে বাজার করে দিয়ে যায়। আর এভাবেই দিন পার করছি। আমাকে তাদের সাথে রাখার কথা শুনলে ছেলের বউ ঝগড়া করে।
মরিয়ম বেগম আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। চিকিৎসা না করায় প্রায় ১০ বছর আগে বাম পাশের চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। এখন ডান পাশের চোখটিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। হয়তো এটিও নষ্ট হয়ে যাবে।
দিনা বেগম নামে পাশের এক ভাড়াটিয়া জানান, রমজান মাসে বৃদ্ধা মাকে তার ছেলে এখানে রেখে গেছেন। শোবার জন্য ঘরে ছোট একটি চৌকি দিয়েছিলেন। সেটিও ছারপোকায় খাওয়া। তাই এটিও নাই এখন। মরিয়ম বেগম এখন মাটিতে বিছানা করে ঘুমান। এমন একজন বৃদ্ধা মাকে এভাবে একা এই অন্ধকার ঘরে রাখা খুবই অমানবিক। শুনেছি ছেলের বউ নাকি তাদের কাছে রাখতে চায় না। বউয়ের কথায় এখানে বৃদ্ধা মাকে ফেলে গেছে। মরিয়ম বেগমের রান্নাবান্না, কাপড়চোপড় ধোয়া এসব আমরাই করে দেই।
এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগ করা হলে কিরন শিকদার বিষয়টি ব্যক্তিগত জানিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে মাকে আমার দোকানের পাশে একটি ঘর ভাড়া করে সেখানে রেখেছি। যে মায়ের জন্য আমি পৃথিবীর মুখ দেখেছি, সেই মায়ের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। যেখানে রেখেছি সেখানে মায়ের খাবারসহ সব দেখাশোনা আমি নিজেই করছি। কিছুদিনের মধ্যে আমার বোন চলে আসবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।
এদিকে, কিরন শিকদার স্ত্রী লিপি আক্তার কাছে এই বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি হুমকির সুরে বলেন- এসব সংবাদ বন্ধ কর, তা না হলে এক কোটি টাকা খরচ করে হলেও শায়েস্তা করবো। এ ঘটনায় রোববার (২৩ জুন) দুপুরে পলাশ থানায় লিপি আক্তারের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছে স্থানীয় সাংবাদিক নূরে আলম রনি।
অন্যদিকে বিষয়টি নরসিংদী পুলিশ সুপার নজরে আনেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এই অমানবিক ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে কিরণ শিকদারকে আটক করার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ। পরে পলাশ থানা পুলিশ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কিরণ শিকদারকে আটক করে।
এ ব্যাপারে পলাশ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, বৃদ্ধা মাকে নির্জন অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখার ঘটনায় ওই বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সাংবাদিককে হুমকির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply